পুজোর কথা-২ (২০২৫/১৪৩২)
পুজোর কথা-২
সাকিন- পূর্বাচল শক্তি সঙ্ঘ
১৭ তম বর্ষ৷ ২০২৫
নকশা ও প্রতিমা – পার্থ দাশগুপ্ত
গবেষণা – দেবদত্ত গুপ্ত
পুজো প্রসঙ্গে – সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়
আলোকচিত্র -অগ্নিভ চৌধুরী
“সমস্ত আড়াল সরিয়ে আমি বেরিয়ে এসেছি বাইরে।
কোথায় লুকিয়ে রয়েছো তুমি?
প্রকাশিত হও,
আমাদের পরিচয় হোক।”
-অরনি বসু
আবরণ সরিয়ে দিয়ে ‘কোথায় লুকিয়ে রয়েছে তুমি? প্রকাশিত হও’- এই খোঁজা, এই আকুল প্রার্থনা শিল্পীর অন্তর্গত রক্তের ভেতর খেলা করেছে যুগে যুগে। পরিচিত হওয়া কিংবা পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা শিল্পীকে ইন্ধন যুগিয়েছে , তাঁর নিভৃত স্টুডিও তে ছবি লেখার কিংবা গণপরিসরে শিল্পকে প্রতিস্থাপন করার। আবার ‘আমাদের পরিচয় হোক’- এই বাক্যটিকে আমরা আরেকভাবেও দেখতে ও পড়তে পারি । এ যেন এই সময়ের প্রতিষ্ঠিত এক শিল্পীর আহ্বান তাঁরই সমসময়ের অনুজ শিল্পীদের প্রতি । যে পরিচয় সেতুবন্ধ রচনা করছে অবশ্যই ‘শিল্প যাপন’।

কলের শহর হাওড়া, উত্তরপাড়া , তারকেশ্বর কিম্বা রাঢ়ের শান্তিনিকেতন । বাংলার এই শহর, আধাশহর বা মফস্বলে বসবাসকারী সমসময়ের একদল শিল্পীদের স্টুডিওতে পৌঁছে যাচ্ছে পূর্বাচল শক্তি সংঘের পুজো মাঠ। উদ্দেশ্য দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে যৌথ শিল্প সমন্বয়। নকশাকার পার্থ দাশগুপ্তের সম সময়ের সচেতন শিল্পচর্চা কারীদের এই যে খুঁজে নেওয়া , এই যে ‘উলোট পুরান ‘ তা বঙ্গদেশের দুর্গাপুজোশিল্পের ইতিহাসে এক নতুন অভিমুখ খুলে দেয়ার প্রয়াস। নতুন কোন চমক দেয়া নয়, বরং সচেতন শিল্পীদের দৈনন্দিন শিল্প যাপন , মেধা ও মননকে তাদের ব্যক্তিগত স্টুডিও স্পেস কিংবা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গ্যালারির বাইরে এনে স্থাপন করাই ‘মাঠখোদাই কাঠখোদাই’ – এর অভিমুখ।

একই সাথে শিল্প মাঠ প্রণাম জানাচ্ছে বাংলার কাঠখোদাই ছাপচিত্রের প্রবাদপুরুষ শ্রী হরেন দাসকে। যাঁর অজস্র
ছাপচিত্রে ধরা আছে এই বাংলার কৌম্য গ্রামজীবনের শান্ত শ্রীমণ্ডিত মুখচ্ছবি ও জীবনের জয়গান ।
কবি অরনি বসুর যে কবিতাটি দিয়ে শুরু হয়েছিল এই লেখা, সেই কবিতার শেষ দুটো লাইন হল-
“ধরা দাও দু বাহুর নিঃসীম মমতায় ।
সুন্দরের জন্ম হোক ।”

কাঠ ও মাটি ও ছবি দিয়ে যে সকল শিল্পী রূপ দিচ্ছেন ‘মাঠখোদাই কাঠখোদাই’ শিল্প ভাবনা। তাঁরা ওই দু বাহুর নিঃসীম মমতায় জড়িয়ে ধরতে চাইছেন শিল্পের পা দুখানি। তবেই তো সুন্দরের জন্ম। সেখানেই যৌথ শিল্প সমন্বয়ের সার্থকতা