পুজোর কথা-৪ (২০২৫/১৪৩২)
পুজোর কথা-৪
সাকিন- পূর্বাচল শক্তি সঙ্ঘ
১৭তম বর্ষ, ২০২৫
নকশা ও প্রতিমা – পার্থ দাশগুপ্ত
গবেষণা – দেবদত্ত গুপ্ত
পুজো প্রসঙ্গে – সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়
আলোকচিত্র – অগ্নিভ চৌধুরী
“অন্ধের স্পর্শের মতো”
উপরোক্ত শিরোনামটি শ্রী শঙ্খ ঘোষের প্রনবেশ সেন স্মারক বক্তৃতার শীর্ষ নাম।তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ঋণ স্বীকার করেই শুরু হলো এই লেখা। বক্তৃতার একেবারে শেষ অধ্যায়ে তিনি একটি চমৎকার ঘটনার কথা উল্লেখ করে শেষ করছেন। কার্জন পার্কে একদল অন্ধ মানুষ রবীন্দ্রনাথের ‘ রক্তকরবী ‘ নাটক করছেন এবং অভিনয় শেষে তারা সমবেত দর্শকদের আহ্বান জানাচ্ছেন তাঁদের পেতে রাখা হাতের ওপর স্পর্শ করে যাওয়ার জন্য। যাতে তৈরী হয় সংযোগ। নীরবতার সেই সংযোগ, স্পর্শ যেনো বুকের ভিতর গিয়ে বাজে।

এই ‘স্পর্শ ‘ শব্দটিই আমাদের আলোচনার সূচনা বিন্দু। আরেকটি শব্দ এর সাথে আসবেই তা হল ‘অনুভূতি ‘। শিল্প সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান হিসেবে মাটি , কাঠ , কাগজ, ধাতব পদার্থ সমস্ত কিছুই স্পর্শযোগ্য। রূপকারের নিমগ্ন অনুভূতি ও শ্রম যাকে রূপান্তরিত করে শিল্পে।
১৪৩২ সালের পূর্বাচল শক্তি সংঘের পুজোভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে শিল্প সৃষ্টির দুই গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক উপাদান। যাকে ঘিরে ভাবনার আবর্ত, গড়ে তোলার প্রক্রিয়া বহমান।
মাঠ অর্থাৎ ভূমা কিংবা মাটি আর কাঠ এই দুই উপাদানের সমন্বয় ‘মাঠখোদাই কাঠ খোদাই’।

মাটি গর্ভবতী হয়, দুলে ওঠে ফসলের মায়া। নবজন্ম প্রাণ। আবার উল্টো হাতে মৃত কাঠ। চেরাই করে , খোদাই করে রূপকার শিল্পী রূপ দেন
ত্রিমাত্রিকতায় কিংবা ছাপ চিত্রের দ্বিমাত্রিক পটে। জীবন ও মৃত্যুর ( মাটি ও কাঠ) মধ্যবর্তী এই স্পন্দনই তো শিল্প সৃষ্টির সন্ধিক্ষণ । যে সময় ক্ষণকালের কিন্তু যা সৃষ্টি হল তা আবহমানকালের।
প্রধান নকশাকার পার্থ দাশগুপ্তের সাথে কথোপকথনে উঠে আসছিল এই স্পর্শ, এই কাঠ ও মাঠ খোদাইয়ের ইতিবৃত্ত।
ছাপচিত্রী একটুকরো কাঠের গায়ে আঁচড় দিয়ে খোদাই করেন তাঁর রূপকল্পনা।
যে অংশ খোদিত হলো সেটি রয়ে গেলো সাদা অর্থাৎ আলো। আর উপরিতলের অখোদিত তল হল কালো কালিতে ভরা অর্থাৎ অন্ধকার!

প্রকৃতপক্ষে একজন শিল্পীর যাত্রাই তো এই অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা।
পূর্বাচলের পুজোমাঠকে খোদাই করে কিংবা মগ্ন শিল্পীর স্টুডিও তে কাঠ খোদাই করে, সাদা কালো রঙের দ্বন্দ্বে তৈরী হচ্ছে এই অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের কথকথা।
শিল্প তো নীরবতারই ভাষ্য! সেই নীরবতার থেকে সুন্দর শব্দ তৈরি করতে না পারলে আমরা নীরব থাকি। এই নৈঃশব্দ্য ও শিল্পদৃষ্টি নিয়েই শুরু হোক এক অলৌকিক সংলাপ !
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়।



